কাজ না পেয়ে মালয়েশিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ১০০ বাংলাদেশি
‘আমরা মেহেরপুরের ১০০ জন কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় চার মাস অবস্থান করছি। আমাদের অবস্থা খুব করুণ। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন দয়া করে। তা নাহলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না আমাদের।’
দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ না পেয়ে পরিবারের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এ আবেদন জানিয়েছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের নিমশরনপুর পাড়ার বাসিন্দা রশিদুল ইসলাম।
৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় মেহেরপুরের আরও ১০০ জনের কথা বলা হয়। ভিডিও বার্তাটি গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিতম সাহার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে আটক প্রবাসীদের স্বজনরা জানিয়েছেন।
সরেজমিন উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। কাজিপুর খন্দকার পাড়ার বাসিন্দা জাভেদ মিয়ার ছেলে রুবেল হোসেন। জীবিকার সন্ধানে গতবছরের নভেম্বরে দালালের মাধ্যমে পাড়ি জমান মালয়েশিয়া। তবে তার ভাগ্য বদল হয়নি। প্রতারিত হয়েছেন তিনিও।
রুবেল হোসেনের স্ত্রী রাহেলা খাতুন বলেন, ‘ভিটেমাটি বিক্রি করা ছাড়াও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ গেছে রুবেল। গেলো তিনমাসে সে কোনো কাজ পায়নি। একটি টাকাও দেশে পাঠাতে পারেনি। খাবার খরচের জন্য প্রতিমাসেই টাকা পাঠাতে হয় তার কাছে। একদিকে সংসারের কষ্ট, অন্যদিকে দেনাদারদের চাপ। সবমিলিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’
রুবেল মিয়ার মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ছেইলিকে (ছেলে) মোবাইলে দেখলাম শুধু কানছে। টাকা-পয়সা যা খরচ হয়ছি (হয়েছে) হোক। একন আমার ছেইলিকে বাড়তি আনার ব্যবস্থা কইরি দিক সরকার। আমার ছেইলি কষ্টে আছে, আমি কী কইরি ভাত খাই?’
ভুক্তভোগী তরিকুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার জানান, জমি বিক্রির দেড়লাখ আর সমিতি থেকে চার লাখসহ মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন মজিদ মাস্টারের হাতে। এখন সমিতি থেকে কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে।
আরেক ভুক্তভোগী রুবেল মিয়া। তার স্ত্রী শিল্পী খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী রুবেল বিদেশে যাওয়ার পর থেইকি কষ্টে আছে। তিনবেলা খাইতে পারে না। বাড়ি আশার জন্য প্রতিদিন কান্দে। সরকার যদি ইচ্ছে করে তাইলে আমার স্বামী বাড়ি ফিরতি পারবি। আমাদের আর কিছু বাকি নি (নেই), যা বেইছি তাকে দেশে আনবু।’
কথা বলার একপর্যায়ে এ প্রতিবেদককে ফোনে স্বামী রুবেলের সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলার সুযোগ করে দেন শিল্পী খাতুন।
ভিডিও কলে রুবেল মিয়া বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় তারাজ শহরের একটি বাড়িতে ১০০ জনকে এককক্ষে রাখা হয়েছে। একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর। তিনদিনের মধ্যে একদিন কোম্পানিরর পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হয়। বাকি দিনগুলোতে বাড়ি থেকে টাকা পাঠালে খাবার খাওয়া সম্ভব হয়।’
ওই এলাকার নিমশরন পাড়ার সাথী খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী রাশিদুল ইসলাম বাড়ির এক শতক জমি বিক্রি ও চড়া সুদে তিন লাখ টাকা লোন নিয়ে বিদেশ গিছে। সেখানে আমার স্বামী খুব কষ্টে আছে। কুনু কাজ কাম পায়নি। এখন বাড়িতি ফিরবি কী কইরি তারও ঠিকনি (ঠিক নেই)।’
কথা হয় দালাল মুসা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, মূল কোম্পানির জন্য এদের রিক্রুট করলেও চায়না কোম্পানির জন্য যুবকদের মালয়েশিয়া আনা হয়। এদের অনেককে কাজ দেওয়া হয়েছে। কিছু সংখ্যক ছেলে কাজে না গিয়ে নানাভাবে অন্যদের প্রভাবিত করায় তার অধীনস্থ ১০০ জন একটি ব্যারাকে রাখা হয়েছে। তবে নিয়মিত খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন আব্দুল আওয়াল।
কাজিপুর এলাকার বাসিন্দা সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য মনসুর আলী জানান, এ এলাকার বাসিন্দা মিলন শেখ, রাজন মিয়া, টুটুল আলী, রাশিদুল ইসলাম, জুল হোসেন, আনারুল ইসলাম, রতন মিয়া, রিপন মিয়াসহ আরও ৯০ জন মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তিন চারমাস হলো তারা খুব কষ্টে রয়েছেন। ঠিকমতো খাবার পাচ্ছেন না। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
কাজিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ফারুক হোসেন বলেন, কাজিপুর ও আশপাশের এলাকা থেকে ১০০ জন ৫-৬ লাখ টাকা করে খরচ করে মালয়েশিয়ায় গেছেন। তাদের মুসা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঢাকার ট্রাভেল এজেন্সি মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। ওই ১০০ জন কোনো কাজই পাননি। তারা বাড়িতে ফেরত আসতে চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিতম সাহা বলেন, মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া নাগরিকদের দেশে ফেরত আনতে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরে বিষয়টি অবহিত করার প্রক্রিয়া চলছে।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News