নকল সনদ বাণিজ্যে আসল পুলিশ
সাধারণত লেখাপড়া ও চাকরি করতে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদের প্রয়োজন হয়। আবেদনকারী নাগরিকের বিরুদ্ধে থানায় কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড নেই বলে ওই সনদে প্রত্যয়ন করা হয়ে থাকে। ২০১৭ সাল থেকে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সরবরাহের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। জনগণকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইন ও ডিজিটাল ক্লিয়ারেন্স সেবা দেওয়ায় স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩-এ ভূষিত হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। তবে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সরবরাহ করছে। এর বিনিময়ে তারা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
রাজধানীর পল্টনকেন্দ্রিক এ ধরনের একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের সঙ্গে তিন জেলার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। এরই মধ্যে জালিয়াতিতে জড়িত থাকায় চার পুলিশ সদস্যসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ধারাবাহিক অভিযানের পর তাদের আদালতে তোলা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার চার পুলিশ সদস্য হলেন– নারায়ণগঞ্জের আদালতে কর্মরত কনস্টেবল জাকির হোসেন, সাতক্ষীরায় কর্মরত আবদুর রহমান, আবু ইউসুফ ইমরান ও জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের একাধিক সদস্যের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ চক্রে আরও রয়েছেন রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠান আল-আয়াত ট্রাভেলসের কর্ণধার সাইদুর রহমান ও তাঁর সহযোগী শামীম পারভেজ, তারিকুল ইসলাম, মো. শাহজালাল, এমএইচ গ্লোব ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার হাসানুজ্জামান বাবলু ও মোহর আলী। এ চক্রের কাছ থেকে ৬৪টি জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল সমকালকে বলেন, তাঁর জেলার যে পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে, তিনি আগে যেসব স্থানে ছিলেন সেখানে জালিয়াতি করেছেন। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি জড়িত ছিলেন না। এখানে তিনি আদালতে দায়িত্ব পালন করতেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে সিটিটিসি। এরপর তদন্তে কী উঠে এসেছে, তা সিটিটিসি বলতে পারবে।
সূত্র জানায়, ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নকল রোধে পুলিশ রেফারেন্স নম্বরসহ কিউআর কোড সিস্টেম চালু করেছে। ইস্যু করা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের ওপরের বাঁ পাশে রেফারেন্স নম্বরসহ একটি কিউআর কোড থাকে। এর মাধ্যমে প্রার্থীকে শনাক্ত করা যায়। বিভিন্ন নামে ইস্যু করা প্রতিটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের কিউআর কোড ভিন্ন। তবে জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে এ রকমটি পাওয়া যায় না। অসাধু পুলিশের সহায়তায় যে সনদ ইস্যু করা হয়েছে, তা হুবহু আসল সনদের মতো। কিউআর কোড স্ক্যান করলেই সেখানে প্রকৃত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা বেরিয়ে আসে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রকৃত সনদ সরবরাহ করার আদলেই অর্থ নিয়ে পুলিশ সদস্যরা তা সরবরাহ করেন। কেবল সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার, থানার ওসি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কনস্টেবল জাকির হোসেন চার বছরের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বিশেষ শাখায় যুক্ত ছিলেন। এর পর তাঁকে জেলার প্রসিকিউশন বিভাগে বদলি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ জাল করে সরবরাহ করে আসছিলেন তিনি।
এ ছাড়া সাতক্ষীরা পুলিশের যে চক্রটিকে ধরা হয়েছে, তারাও অনেক দিন ধরে একই ধরনের জালিয়াতিতে জড়িত। তাদের কাছ থেকে নকল সনদ নিয়ে এরই মধ্যে অনেকে দেশ ছেড়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ ও পাসপোর্ট তাদের কাছে পাওয়া গেছে, সেসব ব্যক্তির সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দেবে পুলিশ। এতে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয়ও বেরিয়ে আসবে।
গ্রেপ্তার চক্রের কাছে বিভিন্ন জেলা ও থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের সিল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরির খালি কার্টিজ পেপার পাওয়া গেছে। নয়াপল্টনে জুনাইদ ট্যুরস, বাংলাদেশ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি, বনানীর আন্তরিক ট্র্যাভেলসের ভেতরে বসেও টাকার বিনিময়ে নকল সনদ সরবরাহ করত চক্রটি। কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে তাঁকেও জালিয়াতি করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হতো। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাসিন্দাদের কাছে প্রায় দুই হাজার জাল সনদ বিক্রি করা হয়। কোনো রোহিঙ্গাকে এ ধরনের সনদ দেওয়া হয়েছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদনকারী অনলাইনে তাঁর আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। সনদে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির স্বাক্ষর, পুলিশ সুপার বা পুলিশের উপকমিশনারের প্রতিস্বাক্ষর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন হওয়ার পর আবেদনকারী সশরীর গিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় বা মহানগরের ক্ষেত্রে উপকমিশনারের কার্যালয়ের ওয়ান স্টপ সার্ভিস কাউন্টার থেকে সনদ গ্রহণ করতে পারেন। পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও সনদ গ্রহণ করা যায়। আবেদন জমা হওয়ার পর ঢাকায় সাত কর্মদিবস আর ঢাকার বাইরে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পাওয়া যায় সনদ।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সারাদেশে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সিস্টেম ‘ই-সার্ভিস’ কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে এ কার্যক্রম দেশের সব থানায় চলমান। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেয়েছেন।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News