তানভীর- জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন
ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ এবং তাঁর স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলায় অন্য সাত আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম গতকাল মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।
সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় ২০১২ সালে হলমার্ক গ্রুপের মালিক, কর্মকর্তা ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। গতকাল রায় হওয়া মামলাটি ওইসব মামলার একটি।
২৪৮ পৃষ্ঠা রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘মামলার ঘটনাটি ব্যাংকিং ইতিহাসে বিস্ময়কর একটি ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। তাই অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো।’ কারাগারে থাকা তানভীর ও জেসমিনকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করেন আদালত। একই সঙ্গে ৪২০ ধারায় তাদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন– তানভীরের ভায়রা ও হলমার্কের জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ম্যাপ স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আবদুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। আর ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেন আদালত।
বাকি আসামিদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি মাইনুল হক, ডিজিএম সফিজউদ্দিন আহমেদ, ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, প্রধান কার্যালয়ের জিএম মীর মহিদুর রহমান, এজিএম কামরুল হোসেন খান, জিএম ননী গোপাল নাথ ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আর ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাদের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অন্য দুই ধারায় তাঁকে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, মতিন, হুমায়ুন, ননী গোপাল, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেহেরুন্নেসা মেরি ও জাকারিয়া পলাতক রয়েছেন। জামাল উদ্দিন ও আলতাফ ছিলেন জামিনে। তুষারসহ বাকি আটজন কারাগারে রয়েছেন।
ভুয়া কোম্পানি ম্যাপ স্পিনিং মিলসের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১২ মার্চ আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৯ মার্চ দিন রাখেন আদালত।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামিদের উপযুক্ত সাজা হয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। যত ক্ষমতাধরই হোক, অপরাধ করলে তাকে সাজা পেতে হবে।’ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
রায় শুনে বিমর্ষ তানভীর-জেসমিন
গতকাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়েন হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন। রায় ঘোষণার পর অন্তত ৩০ মিনিট তারা কোনো কথা বলেননি। দু’জন তখন আদালত কক্ষে পাশাপাশি বসে ছিলেন। তানভীর বসা ছিলেন হুইলচেয়ারে আর জেসমিন একটি বেঞ্চে। রায় শুনে দু’জনই মাথা নিচু করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তানভীর তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা আদালত কক্ষে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন তানভীর। এ সময় তাঁর পরনে ছিল সাদা শার্ট। পরে আদালত কক্ষের বাইরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংকের কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি।’ সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে এক পর্যায়ে ক্ষেপে যান তিনি। আদালতের অনুমতি নিয়ে এদিন ব্যক্তিগত গাড়িতে কারাগার থেকে যাতায়াত করেন তানভীর, জেসমিন ইসলাম ও তুষার আহমেদ।
রায় শুনে পালালেন দণ্ডিত আসামি
হলমার্ক কেলেঙ্কারির এক মামলায় সাজার রায় শুনে আদালত থেকে পালিয়ে গেছেন দণ্ডিত আসামি মো. জামাল উদ্দিন সরকার। তিনি সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় দুই ধারায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৭ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
জামিনে থাকা জামাল উদ্দিন সরকার গতকাল মামলার রায় শুনতে আদালতে হাজির হন। ওকালতনামায় স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু রায় শোনার পর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আদালত থেকে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে জামাল উদ্দিনের আইনজীবী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘রায় ঘোষণার সময়ও তিনি আদালতে ছিলেন। রায়ের পর পেছনে তাকিয়ে দেখি তিনি নেই।’ পরে জামাল উদ্দিনের জামিন বাতিল করে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News