ফরিদপুর প্রতিনিধি :

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, "আমরা দুই বছর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ২৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলাম এবং আমাদের বিশ্বাস ছিল যে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার শেষ হবে। তবে আমরা জানতাম না কবে এই পরিবর্তন আসবে। এখন, আমরা ৩১ দফার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারব, তবে সেটি তখনই সম্ভব হবে, যখন জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হবেন। এজন্য ৩১ দফাকে জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।"

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়, যেখানে বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক আলোচনা হয়।

তারেক রহমান বলেন, "বিএনপি একটি জনমুখী দল এবং এর নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে। আমরা শিগগিরই দেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসতে চাই। স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করার পেছনে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ভূমিকা রয়েছে, যা ভুলে গেলে চলবে না। এখন আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে কাজ করতে হবে।"

দেশের অস্থিরতা দূর করতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং দ্রুত একটি স্বাধীন নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেন। তিনি বলেন, "সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, বিএনপি একটি স্বাধীন নির্বাচন চায় এবং আমরা সে নির্বাচনের ফল মেনে নেব। জনসমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পাবে।"

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো জবাবদিহি ছিল না, কিন্তু আমরা দেশে জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। চেয়ারম্যান থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।"

দেশীয় চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা অর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "তাহলেই রোগীরা বিদেশে যাবে না।"

এ সময় তিনি আরও বলেন, "বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এক ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। এই বিষয়ে নীতিগতভাবে বিএনপি একমত।"

তিনি আরও জানান, "গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যে সংবিধান-আইন রয়েছে, সেটাকেই বিএনপি সমর্থন করে। প্রতিটি মানুষ একটিই ভোট দেবে, বিএনপি এই নীতি অনুসরণ করে।"

সভায় সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, "হাসিনার অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ হচ্ছে বিএনপির এই ৩১ দফা। এটি একটি মানবিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা।"

সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ৩১ দফা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মেহেবী আমিন।

বিকেল সাড়ে ১০টার দিকে এ কর্মশালা শুরু হয়। এতে ফরিদপুর জেলা ছাড়াও রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের বিএনপি নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ তারেক রহমানকে নানা প্রশ্ন করেন এবং তিনি সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন।