ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Publish : 11:00 AM, 14 December 2024.
Digital Solutions Ltd

পড়ে আছে করোনা টিকার দুই হাজার কোটি টাকা : সংকটের সময় ডলার অব্যবহৃত থাকায় ক্ষুব্ধ অর্থ মন্ত্রণালয়

Publish : 11:00 AM, 14 December 2024.
পড়ে আছে করোনা টিকার দুই হাজার কোটি টাকা : সংকটের সময় ডলার অব্যবহৃত থাকায় ক্ষুব্ধ অর্থ মন্ত্রণালয়

পড়ে আছে করোনা টিকার দুই হাজার কোটি টাকা : সংকটের সময় ডলার অব্যবহৃত থাকায় ক্ষুব্ধ অর্থ মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক :

করোনার টিকা কেনার জন্য সরকার দুই বছর আগে এডিবি থেকে ঋণ নিয়ে ইউনিসেফকে ৯৪ কোটি ডলার দেয়। এর মধ্যে প্রায় ১৮ কোটি ডলার অর্থাৎ বর্তমান বিনিময়হার অনুযায়ী দুই হাজার কোটি টাকার বেশি অব্যবহৃত থেকে যায়। দেশ যখন তীব্র ডলার সংকটে তখন অদৃশ্য কারণে প্রায় দুই বছরেও ওই ডলার ফেরত আনা হয়নি। কেন এ অর্থ আনা হলো না, তা কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না। টিকা কেনার  চুক্তি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের মধ্যে হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে পড়ে থাকা অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এর আগেও এ অর্থ ফেরতের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হলেও অধিদপ্তর থেকে তা জানানো হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ২০২১ সালের ২৪ জুন সরকারের ৯৪ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এশিয়া-প্যাসিফিক ভ্যাকসিন অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি প্রোগ্রামের আওতায় রেসপনসিভ কভিড-১৯ ভ্যাকসিনস ফর রিকভারি প্রকল্পের জন্য এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। ঋণের অর্থ দিয়ে টিকা কেনাসহ আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কিনা, তাও স্পষ্ট নয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, পুরো টিকা কেনার প্রয়োজন না হওয়ায় ১৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলারে ইউনিসেফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থেকে যায়। স্থিতি অর্থের বিপরীতে সুদ জমা হয়ে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৮ কোটি ডলার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এটি সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে সংশোধন করে সুদ সরকারি কোষাগারে জমা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আবারও কভিড-১৯ টিকা ক্রয়ে উপর্যুক্ত ঋণ চুক্তির আওতায় অব্যয়িত অর্থ সুদসহ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চুক্তি সংশোধনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনিরা পারভীনের। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির টিকা দেওয়া হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দেশে করোনা টিকার সংকট দেখা দেয়। ফলে ২০২১ সালের আগস্টের পর তিন-চার মাস বন্ধ রাখা হয় গণটিকা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। সেই সময়েই তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উদ্যোগে ইউনিসেফের মাধ্যমে চীন থেকে টিকা আনতে চুক্তি হয়। তবে পরে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভের (গ্যাভি) মাধ্যমে তুলনামূলক কম দামে টিকা পায় বাংলাদেশ। এতে করে ইউনিসেফের সঙ্গে চুক্তির পুরো টিকা কেনার প্রয়োজন হয়নি। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরও বলছে, যেহেতু টিকার প্রয়োজন হয়নি, তাই তখনই ইউনিসেফ থেকে পড়ে থাকা ডলার ফেরত আনার সুযোগ ছিল। তবে কেন তা ফেরত আনা হয়নি, তার সদুত্তর মিলছে না। এডিবির ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এ বিষয়ে সংস্থাটি বারবার জানতে চাইলেও কোনো উত্তর দিতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইউনিসেফের মাধ্যমে টিকা ক্রয়ের প্রোগ্রাম পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দেশে করোনা টিকার যখন সংকট দেখা দেয়, তখন ওই চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিয়ে কিছু টিকা কেনাও হয়। তবে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বিনামূল্যে টিকা পাওয়ার কারণে এডিবির পুরো টাকা খরচ করার  দরকার হয়নি।

জানা গেছে, এডিবির ঋণের অব্যবহৃত অর্থ দিয়ে নতুন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অধীনে নিয়মিত  টিকা কেনার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তবে এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানান মিজানুর রহমান। দুই বছর ধরে এত টাকা পড়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ দেখভাল করত। টিকা কেনার বিষয়ে ওই অনুবিভাগের কাছে বিস্তারিত তথ্য ছিল। তবে পরে প্রকল্পটির দায়িত্ব পরিকল্পনা অনুবিভাগে নেওয়া হয়। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি সেই সময় কভিড-১৯ টিকাবিষয়ক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, টিকা ক্রয়ের দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। টিকা হাতে পাওয়ার পর বণ্টন ও প্রয়োগের দায়িত্ব ছিল অধিদপ্তরের। দীর্ঘদিন টাকা পড়ে থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।

সেই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে ছিলেন ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। দুইজনকে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া মেলেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর সমকালকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে নতুন অপারেশনাল প্ল্যান পাস না হওয়ায় অর্থ সংকট রয়েছে। ইপিআইর টিকা কেনা নিয়েও অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। তাই নতুন করে ইউনিসেফের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ইপিআইর টিকা এই টাকা দিয়ে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হবে। এরপর মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, টিকা ক্রয়ের  টাকা পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি অবগত। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে সমকালকে বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই তীব্র ডলার সংকটে পড়ে দেশ। তখন থেকেই বিভিন্ন দাতা সংস্থার পাশাপাশি কঠিন শর্তে অন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ কর্মসূচিতে যায় বাংলাদেশ। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর গাফিলতিতে ১৮ কোটি ডলার দুই বছর ধরে পড়ে আছে। কেন এ অর্থ ফেরত আনতে তৎপরতা চালানো হয়নি, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

কারণ, করোনা মহামারি কেনাকাটা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ  রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির প্রথম ঢেউ মোকাবিলার জন্য ২০২০ সালের জুনের আগে জরুরিভিত্তিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুরক্ষাসামগ্রী কেনায়  অনিয়ম হয়। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে করোনাসংক্রান্ত বিভিন্ন কেনাকাটার পাশাপাশি কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য বিদেশি প্রকল্পে সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিপুল অনিয়ম ধরা পড়ে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ বিভাগের অন্যান্য খবর

Search bd News

পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।

সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর

পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত

নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৫ সালের ছুটির তালিকা প্রকাশ শিরোনাম মেঘনায় মালবাহী জাহাজ থেকে ৬ মরদেহ উদ্ধার শিরোনাম বিশেষ বিধান জারি: ব্যাংক নিরীক্ষায় নিয়োগ হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান শিরোনাম রিজার্ভ ছাড়াল ২০ বিলিয়ন ডলার শিরোনাম ব্যাট হাতে জ্যোতির নতুন ইতিহাস শিরোনাম বিপিএলের উদ্বোধন আজ, সু‌রের মূর্ছনা ছড়াতে মুখিয়ে ফাতেহ আলী