বাদ পড়ছে ৪০ প্রকল্প নতুন আসছে ১৫টি
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অনেক প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে কম গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়ার পরও একটি প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক এবং অপ্রয়োজনীয় ৪০টি প্রকল্প বাদ দেওয়া বা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কার্যতালিকা সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
আগামী সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের পঞ্চম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সভায় আগে অনুমোদিত একটি প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কার্যতালিকা সূত্রে জানা গেছে, একনেক সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ১৫টি প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৮টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক অনুমোদিত ৬টি প্রকল্প একনেক সভাকে অবহিত করার জন্য উপস্থাপন করা হবে। বাকি একটি অনুমোদিত প্রকল্প বাতিলের জন্য প্রস্তাব করা হবে।
এদিকে আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য নতুন ও সংশোধিতসহ উপস্থাপন করা হবে- মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন প্রকল্প, চিলমারী এলাকায় নদীবন্দর নির্মাণ, আশুগঞ্জ পলাশ সবুজ প্রকল্প, অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কর্তন ও বাগান পুনঃসৃজন এবং রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন প্রকল্প, রশিদপুর-১১নং কূপ (অনুসন্ধান রূপ) খনন, দ্বিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ ও ৯ প্রকল্প, ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন প্রকল্প এবং কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প।
একনেক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গত বছরের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ লাঠিটিলা বনটি সংরক্ষিত হওয়ায় সেখানে সাফারি পার্ক স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে সাফারি পার্ক স্থাপনের জন্য নেওয়া প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত বছর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ভেঙে পাহাড় ও গাছ কেটে তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নিজের নির্বাচনী এলাকায় বন ধ্বংসের এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কারণে পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার। তবে সরকার পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য গঠন করা হয় চার সদস্যের একটি কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু এই প্রকল্প না বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া, অলাভজনক ও অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। বাতিলের পাশাপাশি কিছু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত অথবা ব্যয় কাটছাঁট করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টি প্রকল্প বাতিল অথবা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ওই নির্দেশনার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এ ধরনের প্রকল্পের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়।
বাতিলের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও আছে সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আগ্রহে নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, হাওরে উড়ালসড়ক নির্মিত হলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়বে।
ফরিদপুর টেপাখোলা পার্ক স্থাপন প্রকল্পটিও বাতিল হচ্ছে। সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী থাকার সময় নিজ নির্বাচনী এলাকায় পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালে নেওয়া প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১৮০ কোটি টাকা। যদিও প্রকল্পটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। এর অর্থায়নও স্থগিত হচ্ছে। সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নির্বাচনী এলাকার জন্য মেহেরপুরে মেরিটাইম ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে।
এ ছাড়া নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প, যশোরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, খুলনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের জন্য ছয়টি ছাদ খোলা ট্যুরিস্ট বাস সংগ্রহ প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেগুলোর সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি বাস্তবায়নে মেয়াদ থাকলেও কিছু প্রকল্পও স্থগিত করা হচ্ছে। বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পগুলোর পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৭৪ কোটি টাকা।
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত মেট্রোরেলের সাউদার্ন রুট প্রকল্প (এমআরটি লাইন-৫) বাদ রাখছে সরকার। এর বদলে সরকার গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল (লাইন-২) নির্মাণে জোর দিচ্ছে। সংসদ সদস্যদের পছন্দ অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্পটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্যোগকালে মানুষের আশ্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা (আশ্রয়কেন্দ্র) নির্মাণকাজটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩০টি সাইলো নির্মাণ, মুজিব কেল্লা, বজ্রনিরোধক দণ্ড বসানো, ১২টি আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, ঢাকা বিভাগে উপজেলা ও ইউনিয়নে সড়ক, আমার গ্রাম- আমার শহর, রংপুর সিটি করপোরেশন উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পগুলো বাতিল হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News