মংডুর যুদ্ধে অচল টেকনাফ বন্দর
মিয়ানমারে বছরখানেক ধরেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর পর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তারা। ২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে দেশটিতে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি।
প্রতিবেশী দেশটির ধারাবাহিক সংঘাতের প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে। এখন বন্দর প্রায় অচল। গত সাত দিনে মিয়ানমার থেকে মাত্র একটি মাছের ট্রলার এসেছে। গত শুক্রবার মাছ বহনকারী ট্রলার আসার পর আর কোনো পণ্যবাহী যান বন্দরে আসেনি। মিয়ানমারের পরিস্থিতি শান্ত না হলে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ জান্তা সরকারের পক্ষ হয়ে রোহিঙ্গা যুদ্ধে অংশ নেয়। এতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আরাকান আর্মির কোনো ধরনের ‘সহানুভূতি’ আপাতত নেই।
গতকাল শুক্রবার বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুন-নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৮ হাজার ৮০০ টন নানা ধরনের পণ্য এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছিল ৭৮ হাজার ৫২৭ টন পণ্য। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পণ্য এসেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ২২৫ টন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে জুন-নভেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে মিয়ানমারে পণ্য গেছে মাত্র ৩১০ কেজি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর গেছে ১ হাজার ৪০৮ টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৫২৩ টন পণ্য।
টেকনাফ বন্দরের মহাব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রভাব এখানে পড়েছে। সাত দিন আগে মাছ নিয়ে একটি ট্রলার এসেছে। এর পর কোনো পণ্যবোঝাই যান আসেনি।
বন্দরসংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাভাবিক সময় বন্দরে ১৫-২০টি নানা ধরনের ট্রলার ও জাহাজ থাকে। ৩০-৩৫টি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আছে। কোনো এজেন্টের কাছে এখন কাজ নেই। আগে নানা ধরনের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে গমগম করত বন্দর। তবে মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সবকিছু বদলে গেছে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুকনা সুপারি, পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি, নারকেল, আচার প্রভৃতি পণ্য আমদানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যায় আলু, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয়।
গত ৭ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাখাইনের আন অঞ্চলের ৩০টিরও বেশি জান্তা বাহিনীর ক্যাম্প তারা দখল করে নিয়েছে। এ সময় সামরিক বিমান ও সামরিক হামলা প্রতিহত করে পাল্টা জবাবও দিচ্ছে তারা। এর আগে মংডুতে মিয়ানমারের সেনারা শনিবার থেকে আত্মসমর্পণ শুরু করে।
আরাকান আর্মির ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা কাপড় নাড়তে নাড়তে করুণ অবস্থায় বেরিয়ে আসছেন সেনারা। কেউ কেউ ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন বা ন্যাকড়ায় মোড়ানো আহত পায়ে হেঁটে বের হচ্ছেন। খুব কম লোকের পায়েই জুতা ছিল।
আরাকান আর্মি বলছে, মংড়ু অবরোধের সময় ৪৫০ জনেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। এতে আটক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন ও তাঁর কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাগপোলের নিচে হাঁটু গেড়ে বসে বিদ্রোহীদের ব্যানার ওড়ানোর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
আরাকান আর্মি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সামরিক জান্তার সশস্ত্র সদস্য, তাদের সহযোগী আরএসও, আরসা এবং এআরএ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। তারা অতর্কিত হামলা অব্যাহত রেখেছে। এখনও মংডু অঞ্চলের অন্য অংশে হামলা হচ্ছে। তাই সামরিক প্রয়োজনীয়তা ও জননিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে নাফ নদে (রাখাইন প্রান্তে) সব নদী পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
বিজিবির উপমহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা মিয়ানমারের যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন জান্তা বাহিনীর হয়ে কাজ করেছে। তাই সীমান্তবর্তী আরাকান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার কারণে নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা আছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যেতে পারে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা যেহেতু জান্তা সরকারের পক্ষ হয়ে আরাকন আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, এর প্রভাব এখন দৃশ্যমান হতে পারে। দেশটির সরকার সেখানে পিছু হটেছে। ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মি আক্রোশ দেখাবে। এ পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News