টাকা জমিয়ে মারবেল খেলা
ছোট ছোট জটলা। শিশু থেকে প্রৌঢ়। প্রতিটি জটলায় সব বয়সের মানুষ। তাদের চোখেমুখে আনন্দের রোশনাই। দৃষ্টি সবার মাটিতে; মার্বেলে। ঐতিহ্যের মার্বেল খেলায় মেতেছে সবাই।
গতকাল মঙ্গলবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এ দৃশ্য চোখে পড়ে। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তিতে বসে এ মেলা। আশপাশের কয়েকটি উপজেলা ও জেলার অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে এ মেলায়।
কথিত আছে, রামানন্দের আঁক গ্রামের মেয়ে সোনাই চাঁদের ২৪৫ বছর আগে ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন তিনি। ক্রমশ তাঁর অলৌকিকত্ব ছড়িয়ে পড়লে সেই স্থানে বার্ষিক পূজার আয়োজন করা হয়। এর পর তিনি মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তির দিনে মেলা হয়।
মেলায় মার্বেল খেলা প্রধান আকর্ষণ হলেও থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈষ্ণব সেবা, নিরামিষ খাবার, নবান্ন উৎসব তো থাকেই। নাম সংকীর্তন, কবিগান শেষে সোয়া মণ চালের গুঁড়ার সঙ্গে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল, কলা মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে দর্শনার্থীদের প্রসাদ দেওয়া হয়।
মেলায় ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন শিখা বিশ্বাস। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসেন সুকদেব বিশ্বাস। আগত দর্শনার্থী সুচিত্রা বিশ্বাস বলেন, তিনিও পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারবেল মেলায় এসেছেন। এখানে মারবেল খেলতে পেরে আনন্দিত তারা। ঢাকা থেকে আসা কলেজছাত্রী মৌপিয়া ঘোষ মোম জানান, তিনিও প্রতিবছর এই দিনে রামানন্দের আঁক গ্রামে মামার বাড়িতে আসেন। সবার সঙ্গে মারবেল খেলায় অংশ নেন।
স্থানীয় মণিমোহন বালা ও রিপন বিশ্বাস জানান, তাদের পূর্বপুরুষ এই মার্বেল খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেন, যা আজও অব্যাহত আছে। তারাও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদি জমি, পুকুরপাড়, বাগানসহ সর্বত্র মারবেল খেলার আসর বসেছে। বিশ্বাস বাড়ির মন্দিরের পাশের জমিতে বসেছে বাঁশ-বেতের সামগ্রী, মণিহারি, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ নানা পণ্যের দোকান। মারবেল বিক্রেতা ত্রিমুখী গ্রামের প্রদীপ বল্লভ বলছিলেন, প্রতিবছর মারবেল বিক্রির জন্য এই দিনের অপেক্ষায় থাকেন। এ বছরের বেচাকেনা অন্য বছরের চেয়ে ভালো। ১০০ মারবেল ২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
বাকাল গ্রামের স্কুলছাত্র মিরাজ ফকির ও পশ্চিম রাজিহার গ্রামের ভূমিকা তালুকদারও এসেছে মেলায়। তারা জানাল, সারাবছর টাকা জমিয়েছে এই মারবেল খেলার জন্য।
মেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় দর্শনার্থীদের একটু অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে মেলা কমিটির সভাপতি নির্মল মণ্ডল ও আয়োজক প্রকৌশলী নীহার রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুর ভরাট করা হলে সবার সুবিধা হবে।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News