ডেস্ক রিপোর্ট :

বাংলাদেশের বাজারে স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পর পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রের রপ্তানিকারকরা চরম সমস্যার মুখে পড়েছেন। এই সিদ্ধান্তের কারণে সীমান্তে আটকে থাকা প্রায় ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ দ্রুত নষ্ট হওয়ার উপক্রম।

নাসিক থেকে প্রতি কেজি ১৬ রুপি খরচ করে কিনে, পরিবহনসহ ২২ রুপিতে সীমান্তে আনা পেঁয়াজ এখন মাত্র ২ রুপিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। মালদহের মাহাদিপুর-সোনামসজিদ সীমান্তে দেখা গেছে, ৫০ কেজির বস্তা মাত্র ১০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে স্থানীয় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ২০-২২ রুপি।

সীমান্তে কম দামের কারণে ক্রেতারা সেখানে ভিড় করছেন, তবে রপ্তানিকারকদের জন্য এটি বড় ক্ষতির কারণ। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ হঠাৎ আমদানি বন্ধ করার ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি আমদানিকারকদের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে ঘোজাডাঙ্গা, পেট্রাপোল, মাহাদিপুর ও হিলি সীমান্তে অন্তত ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত ছিল। শুধুমাত্র মাহাদিপুরেই প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ ছিল। রপ্তানি চলমান থাকলে প্রতি কেজিতে ৩০–৩২ রুপিতে বিক্রি করে ৮–১০ রুপি লাভ সম্ভব হতো।

তবে এখন পেঁয়াজ পচতে শুরু করেছে। ক্ষতি কমাতে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক পচা পেঁয়াজ আলাদা করছেন। ব্যবসায়ী সাজিরুল শেখ বলেন, “নাসিক ও ইন্দোর থেকে ২২ রুপি কেজিতে পেঁয়াজ এনেছিলাম। এখন পচতে শুরু করায় ২, ৬ বা ১০ রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।”

আরেক ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম বলেন, “দুই মাস আগেও প্রতিদিন ৩০–৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠাতাম। এখন স্টক পচে যাওয়ায় যা দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতেই বিক্রি করছি। বাংলাদেশ স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা এখন পেঁয়াজ নেবে না।”

মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, রপ্তানি বন্ধ হওয়ার আগে ধারাবাহিকভাবে মজুত করা ৩০ হাজার টন পেঁয়াজই এখন বড় সমস্যা তৈরি করেছে। অন্যদিকে, পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে তুলনামূলক কম স্টক থাকায় সেখানে বড় সংকট দেখা দেয়নি।

ভারতীয় ভোক্তারা এখনো সন্তুষ্ট নন। মালদহের ক্রেতা খাইরুল হক বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলায় বাজারের এই অবস্থা। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত, খুচরা বাজারে দাম এখনো ২০–৩০ রুপি।”

কলকাতাসহ আশপাশের শহরে ভালো মানের পেঁয়াজ ২৫–৩০ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতাদের মতে, গুদামে থাকা স্টক বাজারে আসলে দাম আরও কমে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি এবং সীমান্তে খাদ্য পণ্যের ব্যর্থ মজুত ও বাজার স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।