আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৬২ জনে। গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট এ দুর্যোগে দেশের আটটি প্রদেশে লাখ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন।

ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মুখপাত্র সিরিপং আংকাসাকুলকিয়াত জানান, মৃতদের মধ্যে সঙখলা প্রদেশেই সর্বোচ্চ ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা পানি নামার পর নতুন করে বেশ কিছু মরদেহ উদ্ধার করছেন।

বন্যার পর সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে থাইল্যান্ডজুড়ে সমালোচনা তীব্র হয়েছে। শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আনুতিন স্থানীয়দের কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, “সরকার বন্যাকবলিত জনগণকে যথাযথ নিরাপত্তা ও সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ বিতরণ শুরু হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ঘরবাড়ি মেরামত, ব্যবসা পুনরুদ্ধার ও ব্যক্তিগত ক্ষতির জন্য স্বল্পমেয়াদি সুদবিহীন ঋণসহ অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানি নামতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকা ঘরে ফিরে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র দেখছেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আসবাবপত্র থেকে ব্যক্তিগত সামগ্রী সবই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও আকস্মিক প্লাবনে থাইল্যান্ডের বহু জেলা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েন, বহু সড়ক অচল হয়ে যায় এবং নিচু এলাকার ঘরবাড়ি ও যানবাহন পানিতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর হাট ইয়াইতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, যেখানে পানি কমার পরও নিয়মিতভাবে মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।

মানবিক বিপর্যয়ের এই মুহূর্তে থাই রাজা মহা বাজিরালংকর্নও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তিনি হাট ইয়াই হাসপাতালে ১০ কোটি বাথ (৩.১১ মিলিয়ন ডলার) দানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বন্যায় মৃতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রাজকীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

থাইল্যান্ডের এই ভয়াবহ বন্যা শুধু দেশটির অবকাঠামোই নয়, মানুষের জীবন-জীবিকাকেও বিপর্যস্ত করেছে।