ডেস্ক রিপোর্টার :

শত বছর বয়সী এক মা—লালবড়ু বেগম। যিনি দুই সন্তানকে কোলে-পিঠে মানুষ করেছেন, আজ তাকেই ঠাঁই নিতে হয়েছে একটি মুরগির খোপে।

পটুয়াখালীর সদর উপজেলার লাউকাঠী ইউনিয়নের দক্ষিণ লাউকাঠী গ্রামের এই ঘটনা শুধু এক বৃদ্ধার করুণ বাস্তবতা নয়—এটি আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধের এক নির্মম প্রতিবিম্ব।

শনিবার (৩১ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, শতবর্ষী লালবড়ু বেগম একটি কাঠ-টিনের অস্থায়ী খোপে বসে আছেন। না আছে বিছানা, না আছে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। বর্ষায় পানি পড়ে, গরমে দম বন্ধ হয়ে আসে—এই খোপই তার একমাত্র আশ্রয়।

সংগ্রাম দিয়ে শুরু, অপমানের মধ্যে শেষ জীবন

প্রায় দুই যুগ আগে স্বামী হারানোর পর শুরু হয় লালবড়ুর সংগ্রাম। ভিক্ষা করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। বড় করেছেন দুই ছেলে—মোস্তফা ও নাসিরকে। অথচ আজ সেই সন্তানদের ঘরেই তার জন্য নেই কোনো ঠিকানা।

বর্তমানে তিনি বড় ছেলে মোস্তফা ও পুত্রবধূ রিনার সঙ্গে থাকেন। তবে প্রতিদিন সকালে তারা ঘরে তালা দিয়ে কাজে চলে যান। এ সময় উঠানে কিংবা খোপের ভেতরে সারাদিন কাটান লালবড়ু। চলাফেরা সীমিত, টয়লেট ব্যবহারেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।

“আমি সারাদিন এই খোপেই থাকি। কয়েকদিন আগে পড়ে গিয়েছিলাম, মাথায় আঘাত পেয়েছি। কিন্তু কেউ ডাক্তার দেখায়নি। এখন শুধু আল্লাহর দয়া চাই।”

বড় ছেলে মোস্তফা বলেন, “আমার মা আমাদের সাথেই থাকে। কিন্তু চোখে কম দেখে, কানে কম শোনে। ঘরে চুরি হয়েছিল, তাই তালা দিয়েছিলাম। মা নিজেই মুরগির খোপে বসেছে।”

তবে আশপাশের মানুষজনের মতে, এটি শুধু অভাবের নয়—অযত্ন ও অবহেলার ফল।

স্থানীয় ইটভাটার ম্যানেজার মাসুদ হাওলাদার জানান, এই পরিবার ভূমিহীন এবং সরকারি কোনো সহায়তা পায় না। তিনি বলেন, “এই মা অন্তত শেষ বয়সে একটু শান্তি পাক, সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা উচিত।”

পটুয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইফফাত আরা উর্মি বলেন, “ঘটনাটি নজরে আসার পরেই আমরা খোঁজ নিয়েছি। আগামীকাল আমি নিজেই পরিবারটির কাছে যাব এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে।”