ডেস্ক রিপোর্টার :

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় একই ঘরে স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকেরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—রাসেল মিয়া (১৮) ও তার স্ত্রী জুঁই খাতুন (১৫)। তারা তিন মাস আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিয়ের পর এই নবদম্পতির দাম্পত্য জীবন ছিল শান্তিপূর্ণ। কোনো পারিবারিক কলহ বা দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত আগে কখনও পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করে তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চরম স্তব্ধতা ও রহস্য।

নিহত রাসেল ছিলেন রাজমিস্ত্রীর সহকারী। তার বাবা জাকিরুল ইসলাম এবং মা রাশিদা বেগম জানান, সোমবার দুপুরে ছেলে ও পুত্রবধূ পুকুরে গোসল করেন, এরপর স্বাভাবিকভাবে রাতের খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে রাশিদা বেগম ছেলেকে ডাকাডাকি করলে সাড়া না পেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখেন, ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে রাসেল ও জুঁইয়ের নিথর দেহ।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘর থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি আত্মহত্যা। রাসেল গলায় গামছা এবং জুঁই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যার কারণ নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে। পারিবারিক, সামাজিক কিংবা মানসিক কোন চাপে তারা ছিলেন কি না, সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এদিকে, এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে ডাকেরপাড়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বলছেন, “ওরা দুজন খুব ভালো ছিল। ঝগড়া-বিবাদের কোনো খবর কেউ জানত না। এমন মৃত্যু কেউ ভাবতেও পারেনি।”

মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন সমাজকর্মীরা। তারা বলছেন, তরুণদের মানসিক চাপ, দাম্পত্য জটিলতা কিংবা পারিবারিক প্রত্যাশার চাপে অনেকে এমন পথ বেছে নেয়, যেটি পুরো পরিবার ও সমাজকে বিষাদে ভাসিয়ে দেয়।

পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।