ডেস্ক রিপোর্টার :

মিয়ানমারে আবারও সামরিক জান্তার নিষ্ঠুর রূপ দেখল বিশ্ব। মানবিক যুদ্ধবিরতির মধ্যেও স্কুলে বিমান হামলা চালিয়ে ২০ শিশু ও ২ শিক্ষককে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী।

সোমবার সকালে (১২ মে), মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের ওয়ে থেইন কুইন গ্রামের একটি স্কুলে স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে এই বর্বর হামলা চালানো হয়। গ্রামটি মার্চে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, সকালবেলা ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ করে একটি যুদ্ধবিমান স্কুল লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে শিশুর কান্না, ধ্বংসস্তূপ ও মৃত্যুতে ভরে যায় স্কুল প্রাঙ্গণ।

স্কুলের এক ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষক বলেন,

“আমরা শিশুদের আলাদা জায়গায় সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু যুদ্ধবিমানটি এত দ্রুত চলে আসে এবং হামলা চালায় যে কিছুই করার সময় পাইনি। এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত—তাদের মধ্যে ২০ জনই শিশু।”

স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম টিআরটি গ্লোবালও প্রাণহানির এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে এই হামলার কোনো ব্যাখ্যা এখনো দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি আরও হৃদয়বিদারক করে তুলেছে এই সত্য—ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক সময়, যখন সামরিক সরকার চলতি মে মাসজুড়ে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’র ঘোষণা দিয়েছিল। জান্তার দাবি ছিল, ভূমিকম্প-পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য লড়াই স্থগিত থাকবে। অথচ বাস্তবে সাগাইং, কারেন এবং চিন রাজ্যসহ নানা অঞ্চলে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। সেনাবাহিনী একদিকে আন্দোলনকারীদের নির্মমভাবে দমন করছে, অন্যদিকে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ বাহিনী সংঘবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব সম্প্রদায় বারবার এই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানালেও মিয়ানমারে শিশুদের নিরাপত্তা পর্যন্ত নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

এই ঘটনাটি শুধু একটি দুঃখজনক পরিসংখ্যান নয়—এটি প্রমাণ করে, যুদ্ধবিরতির আড়ালেও কী ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মহলের এখনই কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি, যেন আর কোনো শিশু এমন নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়।