ডেস্ক রিপোর্টার :

ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে আটক করা ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কোনো বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর এই অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা ইতোমধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়ের করেছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ মে রাতে দিল্লির উত্তম নগর, বিকাশপুরি ও হাসতসাল এলাকা থেকে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ৪০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আটকের মাত্র দুই দিন পর, ৮ মে, বিমানযোগে তাদের আন্দামানে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে তাদের মিয়ানমারের জলসীমার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একে একে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।

পরিবারগুলোর দাবি, রোহিঙ্গাদের চোখ ও হাত-পা বাঁধা ছিল। পানিতে ফেলার আগে কেবল লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে তাদের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অনেকে প্রায় ৩০ মিনিট সাঁতার কেটে প্রাণে বাঁচেন। পরবর্তীতে একদল জেলে কয়েকজনকে উদ্ধার করে একটি দ্বীপে নিয়ে যায়।

নিখোঁজদের একজনের ভাই জানান, “ভাই ফোন করে জানায়—তাদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। পরে এক জেলে উদ্ধার করে তাকে ফোন করার সুযোগ দেয়।”

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বিষয়টি তদন্তে একজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত করেছে এবং ভারত সরকারকে ভবিষ্যতে শরণার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের অমানবিক আচরণ না করার জন্য সতর্ক করেছে।

জাতিসংঘের আইনজীবীরা বলছেন, এই রোহিঙ্গাদের ভারতীয় সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের অধীনে আদালতে পেশ করা হয়নি, যা গুরুতর সাংবিধানিক লঙ্ঘন। আটক ও প্রক্রিয়া চালানোর সময় নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় কোনো বিশেষ ব্যবস্থাও ছিল না।

ইউএনএইচসিআরের আইন কর্মকর্তা দিলোয়ার হোসাইন বলেন,

“এটি ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অমানবিক। নারীদের ক্ষেত্রে স্পেশাল জুভেনাইল পুলিশ ইউনিটেরও উপস্থিতি ছিল না। এমনকি এক গর্ভপাত করা নারীর স্বামীকেও জোর করে তুলে নেওয়া হয়।”

এমনকি অভিযোগ আছে, তিন পুলিশ সদস্য মদ্যপ অবস্থায় এক নারীর ঘরে ঢুকে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন।

ভারত সরকার কিংবা দেশটির নৌবাহিনী এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মন্তব্য করেনি।

বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারতসহ প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আহ্বান আরও জোরালো হয়েছে এ ঘটনার পর।