ডেস্ক রিপোর্টার :

চট্টগ্রামের কাপাসগোলা মোড়ে খোলা ড্রেনে পড়ে ৬ মাস বয়সী শিশু শেহরিশের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। এই মৃত্যু আর পাঁচটি দুর্ঘটনার মতো নয়—এটি নগর ব্যবস্থাপনার এক জঘন্য উদাসীনতার নির্মম পরিণতি। জনস্বার্থে এই রিটটি দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নগর পরিকল্পনা ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় চরম গাফিলতি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এই মৃত্যু ঘটেছে। সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের—এবং এই ঘটনায় তা লঙ্ঘিত হয়েছে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, “একটি ছয় মাসের শিশুর এমন করুণ মৃত্যু কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনার এক ভয়াবহ ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। খোলা ড্রেন যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে, অথচ দায়ী সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততা বেদনাদায়ক ও অগ্রহণযোগ্য। আমি এই রিটের মাধ্যমে শুধু একটি পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার চাইছি না বরং চাইছি একটি টেকসই ও মানবিক নগর পরিবেশ।”

এই ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ৭ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে যেসব নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে:

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় যত খোলা ড্রেন, ঝুঁকিপূর্ণ খাল বা খোলা নালা আছে, তার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

তালিকা অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তা বন্ধ বা নিরাপদ করতে হবে।

ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের মৃত্যু না ঘটে, সে জন্য স্থায়ী ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের নগর উন্নয়নে শুধু সড়ক বা ভবন নির্মাণই নয়, সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন জননিরাপত্তা, শিশুস্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোতে। চট্টগ্রামে এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। আগেও এমন খোলা ড্রেনে পড়ে বহু শিশু ও মানুষ হতাহত হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যদি এবারও এই ঘটনা ‘দুঃখজনক’ বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে আরও প্রাণ হারাবে। তাই হাইকোর্টে দায়ের করা এই রিট কেবল একটি মামলাই নয়—এটি একটি প্রশ্ন, যে প্রশ্নটি এখন সারা শহরের নাগরিকের।