ছবি সংগৃহীত
তিন সদস্যকে নির্মমভাবে হারিয়ে বিচারের আশায় মুখ খুলেছেন কুমিল্লার মুরাদনগরের রুমা আক্তার। দাবি করেছেন— উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদেই ঘটেছে এই ট্রিপল মার্ডার। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “আমার মা, ভাই, বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এ সবের পেছনে ছিল উপদেষ্টার বাবা বিল্লাল।”
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রুমা জানান, গত ৩ জুলাই ভোরে কুমিল্লার কড়ইবাড়ি গ্রামে তার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী। হত্যাকাণ্ডের সময় তাকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মাথায় ৭২টি সেলাই, শরীরজুড়ে অসংখ্য আঘাত নিয়ে এখনো চিকিৎসাধীন তিনি।
রুমা বলেন,
কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন নিহতদের স্বজন রুমা আক্তার। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক হৃদয়বিদারক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
“আমাদের পরিবারের মা, ভাই, বোন— সবাইকে মেরে শেষ করে দিয়েছে। এখনো যদি বিচার না পাই, তাহলে বাঁচার পথ থাকছে না। আমাদের আর শেষ কইরেন না, একটু বাঁচতে দিন!”
তিনি দাবি করেন, গত ৩ জুলাই সকালে তার মা, ভাই এবং বোনকে একসঙ্গে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং তাকেও হত্যা করতে ছুরি চালানো হয়। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলেও অভিযোগ করেন রুমা।
সংবাদ সম্মেলনে রুমা জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এক মোবাইল চুরি নিয়ে হট্টগোলের মাধ্যমে। তার মা চোরকে মারধর না করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় বাচ্চু মেম্বার, রবি, শরিফ, শিমুল চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন তার মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
পরদিন, পরিকল্পিতভাবে তার মাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোপন বৈঠক বসে কড়ইবাড়ি গ্রামের তারু মিয়ার বাড়িতে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় পুরো পরিবারকেই শেষ করে দেওয়া হবে যাতে কেউ বিচার চেয়ে মুখ না খুলতে পারে। এরপরই ৩ জুলাই সকাল ৬টায় ভাড়াটে খুনি ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা মিলে চালায় নৃশংস হামলা।
রুমা বলেন,
“প্রথমে আমার মাকে, এরপর ভাই আর বোনকে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমার ওপরও হামলা চালায়— মাথায় ৭২টি শেলাই, সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে আছি শুধু এই অন্যায়ের বিচার চাইতে।”
রুমার অভিযোগ,
“থানায় মামলা হলেও প্রধান আসামিদের নাম বাদ দিয়ে পুলিশ ইচ্ছেমতো নাম যোগ করেছে। মামলার মূল আসামি বিল্লাল হোসেনের নাম বাদ দেওয়া হয়। কারণ, তিনি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা।”
তিনি বলেন, র্যাব কয়েকজনকে ধরলেও পরে আর তেমন কোনো অভিযান হয়নি। অনেক আসামি জামিনে বেরিয়ে এসেছে এবং প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি শিমুল চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা আসিফের বাসায় লুকিয়ে রাখার তথ্যও তারা পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার কয়েকটি সুস্পষ্ট দাবি তুলে ধরেন:
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
শিমুল চেয়ারম্যানসহ খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ানো আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
মামলাটি পুনঃতদন্ত করে বাদ পড়া প্রকৃত আসামিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে কোনো ভিন্ন বক্তব্য এলে তা জোরপূর্বক আদায় করা হয়েছে ধরে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষপ্রান্তে রুমার চোখের জল আর কণ্ঠের কাঁপুনি ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকে।
“আমাদের শেষ করে দিসে। আর যেন কেউ না মরে, আর যেন কোনো মা বোন হারায়— এই বিচারটা যেন হয়। আল্লাহর নামে বলছি, আমরা শুধু একটু বাঁচতে চাই।”
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News