ছবি সংগৃহীত
আট বছর পার হলেও এখনো নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে পারেননি রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের মংডু থেকে বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠী আজও অপেক্ষায় আছে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের।
উখিয়ার কুতুপালং ৩ নম্বর ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইয়াসিন উল্লাহর ভাষায়—
“ভিটেমাটি ছেড়ে এই দেশে এসেছি। আগে সব ছিল, অথচ আজ ত্রিপলের নিচে জীবন কাটাতে হচ্ছে।”
বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। তবে প্রত্যাবাসনের পথ এখনো সুগম হয়নি। বরং মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও জান্তা সেনার সংঘাত নতুন করে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। শুধু গত ১৮ মাসেই মংডু ও বুথিডং থেকে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সীমান্তে অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় কড়া অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। বিজিবি জানায়, গত পাঁচ দিনে অন্তত ৩০০ রোহিঙ্গাকে প্রবেশের চেষ্টা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন,
“অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
অন্যদিকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রয়েছে উদ্বেগ। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন,
“আমরা এই সংকটের সমাধান চাই। ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত বিচরণ ও অপরাধ রুখতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।”
তবে আশার আলোও দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো। গত রমজানে উখিয়ার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন— আগামী বছর ঈদের আগে ঘরে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এই প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারে গতকাল শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি নেই সান লুইন বাংলাদেশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,
“আমরা নিরাপদ, মর্যাদা ও অধিকারের সঙ্গে মাতৃভূমিতে ফিরতে চাই। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের আওয়াজ পৌঁছে যাবে।”
সম্মেলনে আজ দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং প্রত্যাবাসনের পথ উন্মুক্ত করা।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরও জানায়, সংকট সমাধানের মূল চাবিকাঠি মিয়ানমারে। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরতে পারবে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই কক্সবাজার সম্মেলনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর কাতারে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
আট বছরের দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পরও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রোহিঙ্গাদের আশা একটাই— মাতৃভূমিতে ফেরার সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News