ছবি সংগৃহীত
তিন দশকেরও বেশি সময় আগে সুন্দরবনের গহীনে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের ভয়ঙ্কর আক্রমণের শিকার হন বাগেরহাটের শরণখোলার মো. আব্দুস সামাদ হাওলাদার । নিজের জীবন বাঁচাতে বাঘের জিব্বা চেপে ধরা, ঠোঁটে কামড় বসানো, তিনটা দাঁত ও দুই চোখ হারানো সবই যেন " ওয়াইল্ড লাইফ" সিনেমার কাহিনি। কিন্তু তা বাস্তবেই ঘটেছে এই মানুষটির জীবনে।
বাঘের মুখ থেকে ফিরে এসে তিনি হয়েছিলেন গ্রামের বীর। পেয়েছিলেন ‘বাঘা সামাদ’ উপাধি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই গল্প হারিয়ে গেছে। বেঁচে আছেন শুধু এক হতদরিদ্র, রোগজর্জর মানুষ যিনি আজও লড়ছেন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।
গত রবিবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা নদীর বেড়িবাঁধের ঢালুতে সামাদের একাকী জীবন ছোট্ট একটি ঘরে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন সামাদ। তাঁর টিনের চালার একটি ঘর ও টিনের বেড়া। ঘরের ভেতরে প্রয়োজনীয় কোনো আসবাবপত্র নেই, চারদিকে কেবল শূন্যতা। তার স্ত্রী আলেয়া বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। তার স্ত্রীর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও সে ফিরেনি বাড়িতে । দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও অভাবের কারণে তারা আশ্রয় প্রকল্পে থাকেন; তারাও দিনমজুরির কাজ করেন বলে সামাদ জানিয়েছেন। কিছুদিন আগেও সামাদ ও তাঁর স্ত্রী মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি দোকান পেলেও সেটি প্রায় তালাবদ্ধ থাকে, কারণ সেখানে কোনো বেচাকেনা হয় না। দোকানে নেয় তেমন কোন মালামাল।
সার্চ বিডি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাঘা সামাদ বলেন, সেদিন বনে গিয়েছিলাম কাঠ সংগ্রহ করতে। দুপুরে চিড়া খেতে বসেছলাম নদীর তীরে এমন সময় হঠাৎ দেখি সামনে এক বিশাল বাঘ দাঁড়িয়ে। তখন একমাত্র আল্লার উপর ভরসা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। বাঘটি আমার গলার নিচে কামড়ে ধরে এবং হাত দিয়ে ঝাপটা দিলে আমার হাতেও কামড় বসায়। আমি না পেরে বাঘের মুখে হাত ঢুকিয়ে জিভ ধরে ফেলি। জিভে অনেক ধার থাকায় হাত ছুলে যায়। এরপর বাঘের কান ধরার চেষ্টা করি যাতে ওর পিঠে উঠতে পারি, কিন্তু পারিনি।
বাঘ যখন প্রথম থাবা দেয়, তখন আমার ডান চোখটা গলে যায়। পরের থাবায় বাম চোখ ঝুলে পড়ে। এরপর শরীরের সব রক্ত বের হতে থাকে। আমি মনে মনে শুধু আল্লাহকে বলি, ‘আল্লাহ, তুমি ছাড়া তো আমাকে বাঁচানোর কেউ নেই।’ তাই বলে আমি বাঘের ঠোঁটে কামড় দিই। ঠোঁটে কামড় দিলে আমার তিনটা দাঁত বাঘের ঠোঁটে লেগে থেকে যায় , বাঘটি ব্যথা পায়।
এক পর্যায়ে দেখি বাঘটি আমাকে ফেলে একটু দূরে চলে যায়। আমার চিৎকার শুনে একসাথে কাঠ সংগ্রহ করতে আসা সহযোগীরা দা-কুড়াল নিয়ে ছুটে আসে। তারা বাঘকে ধাওয়া দিলে বাঘ পালিয়ে যায়।
আমার শরীরের ক্ষতস্থান গাছের পাতা দিয়ে বেঁধে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে আসা একটি নৌকায় করে মোংলায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে আমাকে খুলনায় পাঠানো হয়। টাকার অভাবে এলাকার মানুষের সাহায্যে ১ মাস ১৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।
তিনি আরো বলেন, আমি মানুষের কাছে কিছু চাইতেও পারি না। কেউ তেমন কোনো আর্থিক সহযোগিতাও করে না। যখন হাত ও চোখে ব্যথা শুরু হয় তখন টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না। আগে ভিক্ষা করতাম, এখন শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেটাও পারি না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে সাহায্য চাই। আল্লাহ যেন আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকান।
আমার স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করে যেটুকু আয় করে, তা দিয়েই সংসার চলছে । স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করায় সারাদিন আমার একা থাকতে হয়। দুই চোখে না দেখতে পারায় আমার চলতে ফিরতে খুব অসুবিধা হয় । স্ত্রী না আসায় এখন পর্যন্ত দুপুরে আমাদের চুলা জ্বলেনি( ঘড়িতে তখন ৩ টা বেজে ২০ মিনিট) কখন রান্না হবে আর কখন খাবো তার ঠিক নাই । সরকার যদি কোন সাহায্য সহায়তা করে তো বাকি জীনবটা খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতাম
স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস বলেন, চোখ হারানো এই মানুষটা আমাদের গর্ব। কিন্তু তাকে কেউ সাহায্য করে না। সবার উচিত তাকে সম্মান ও সাহায্য দেওয়া।
প্রতিবেশী কলেজছাত্র নাইম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে জানি, সামাদ চাচা বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে ফিরেছেন। অথচ এখন ওষুধ কেনার টাকাও জোটে না। সরকার যদি পাশে দাঁড়াত, অন্তত এই কষ্টগুলো লাঘব হতো।
ওমর ফারুক বলেন, স্থানীয় মুরুব্বীদের কাছ থেকে শুনেছি বাঘা সামাদের কথা কিন্তু তার জীবন কাটে ভয়াবহ খারাপ অবস্থায় কাটছে, না দেখলে বুঝা যাবে না। অভাবের জন্য যেতো সুন্দরবনে কিন্তু সেই সুন্দরবন থেকে তার এই অবস্থা। সরকার থেকে তো সব অনুমতি নিয়ে যেত সরকারের উচিৎ তারে এখন দেখা।
তিন দশক আগে বাঘের থাবা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষটি আজও বেঁচে থাকার জন্য লড়ছেন ব্যথা, ব্যর্থতা, অবহেলার আর নিঃসঙ্গতায় । নেই কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস, নেই সরকারি সাহায্য। বাঘা সামাদের পাশে সরকারকে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News