ছবি সংগ্রহীত
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক শুধু পণ্যের আদান-প্রদানের বিষয় নয়—এটি ক্রমেই পরিণত হচ্ছে বৈশ্বিক নেতৃত্ব ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের সংঘর্ষে। এই বাস্তবতাই যেন নতুন করে সামনে এনেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার বাণিজ্যনীতি এখন অনেকটাই চীন-কেন্দ্রিক ‘শাস্তিমূলক অভিযানে’ রূপ নিচ্ছে।
সম্প্রতি ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্য যুদ্ধ ফের নতুন গতি পেয়েছে। ৯০ দিনের জন্য কিছু দেশের ওপর থেকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হলেও, চীনের ওপর জারি করা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। ট্রাম্পের যুক্তি, বেইজিং আমেরিকান পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে যে ‘অসম্মান’ দেখিয়েছে, এর জবাব দিতেই এই ব্যবস্থা।
তবে এটি শুধু প্রতিশোধ নয়, বরং তার ‘অসমাপ্ত মিশন’—চীনের নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামো ভেঙে নতুন এক বাস্তবতা তৈরি করার প্রচেষ্টা।
চীনের উত্থান বনাম ট্রাম্পের যুক্তি:
চীন এক সময় বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বলেই, বিশ্বজুড়ে সস্তা পণ্য, প্রবৃদ্ধি এবং মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটে। কিন্তু সেই উত্থান পশ্চিমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনৈতিক সংস্কার আনেনি। বরং কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হয়েছে।
২০১৫ সালে ঘোষিত চীনের ‘মেইড ইন চায়না ২০২৫’ নীতির মাধ্যমে দেশটি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, তারা শুধু উৎপাদক নয়, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্বও নিতে চায়। ট্রাম্প এটিকেই যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও শ্রমিকদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন।
বাণিজ্য যুদ্ধের রাজনীতি:
২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণাতেই ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, চীনের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের রাস্টবেল্ট অঞ্চলের পতনের পেছনে দায়ী। তার ভাষায়, চীন ‘আমেরিকার চাকরি চুরি করেছে’। প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি সেই অবস্থানেই দৃঢ় থেকেছেন। তার শুল্কনীতি এই বার্তাই দেয়—মুক্তবাণিজ্য নয়, বরং ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’।
বর্তমানে বিশ্বের ৬০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি চীনে তৈরি হয় এবং ৮০ শতাংশ ব্যাটারির উৎপাদনও সেখানেই। অর্থাৎ, চীনের আধিপত্য আরও বিস্তৃত হয়েছে, যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
প্রশ্ন তিনটি: আলোচনার সুযোগ আছে?
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মূলত তিনটি প্রশ্নের ওপর:
১. চীন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করবে কি না
২. চীন তার রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি সংস্কারে প্রস্তুত কি না
৩. যুক্তরাষ্ট্র আদৌ এখনো মুক্তবাণিজ্যে বিশ্বাস করে কি না
ট্রাম্প শুল্ককে শুধু একটি হাতিয়ার নয়, বরং একটি ‘লক্ষ্য’ হিসেবেই দেখেন। তার মতে, এতে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ে, চাকরি ফিরে আসে এবং রাজস্ব প্রবাহ বাড়ে। কিন্তু বেইজিং যদি মনে করে, এই শুল্ক শুধু আলোচনার জন্য চাপ নয়, বরং মার্কিন শিল্প রক্ষার অজুহাত—তবে তারা আলোচনা বাদ দিয়ে পাল্টা প্রস্তুতি নিতে পারে।
এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে:
বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির এই সংঘাত যদি আলোচনার বদলে প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়, তবে তা হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয়ের সূচনা। এর প্রভাব শুধু আমেরিকা বা চীনেই নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোতেও বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। প্রশ্ন এখন, আগামীর বিশ্ব—সহযোগিতামূলক হবে, না প্রতিযোগিতামূলক?
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News