ছবি সংগ্রহীত
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত। সিরিয়ায় নতুন সরকার গঠনের পর আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সামরিক কৌশলের মোড় ঘুরছে দ্রুত। এমন এক সময়ে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে—ইসরায়েল ও তুরস্ক কি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?
দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা থাকলেও, কখনোই তা সামরিক সংঘর্ষে গড়ায়নি। তবে ২০২৩ সালের গাজায় হামলা ও সাম্প্রতিক সিরিয়া পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
কৌশলগত ভারসাম্য: শক্তির দুই মেরু
তুরস্ক ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি। ভূমধ্যসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত তাদের কৌশলগত অবস্থানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র—উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় তারা বিশ্বের অন্যতম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে যদি সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হয়, তাহলে তা শুধু সীমান্তের ভেতরে থাকবে না—পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা। আর সে কারণে আপাতত উভয় পক্ষই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথেই রয়েছে।
সিরিয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর নতুন একটি সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল আশঙ্কা করছে—সিরিয়ায় ইরানপন্থী গোষ্ঠী ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠন শক্তি সঞ্চয় করছে। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে এটি তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
অন্যদিকে তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি বিদ্রোহীদের দমন এবং সিরিয়ার এককেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সক্রিয়। তারা চায় না পিকেকে বা কুর্দি গোষ্ঠীগুলো আলাদা রাষ্ট্র গড়ে তোলে। এতে দুই দেশের লক্ষ্য ও অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই ভিন্নমুখী।
পর্দার আড়ালে যোগাযোগ
যদিও সামরিক বক্তব্যে উত্তেজনার ইঙ্গিত থাকে, বাস্তবে দুই দেশই গোপন কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, আজারবাইজানে তুরস্ক ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেছে। তাদের লক্ষ্য—সিরিয়ায় ভুল বোঝাবুঝি বা সংঘর্ষ এড়াতে যোগাযোগের পথ খোলা রাখা।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানও স্পষ্ট করেছেন, তারা কোনো সংঘর্ষ চায় না, বরং একটি স্থিতিশীল সিরিয়া চায়—যেখানে কেউ কারও জন্য হুমকি না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের তদারকি ও ট্রাম্পের বার্তা
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রও নীরব নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, “তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো বিরোধ হলে তিনি মধ্যস্থতার জন্য প্রস্তুত।” তিনি এরদোয়ানকে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন, যিনি মধ্যপ্রাচ্যে ভারসাম্য আনতে পারেন।
গাজা হামলার পর তুরস্কের কঠোর বার্তা
২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর তুরস্ক তার অবস্থান কঠোর করে। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে যায়, বাণিজ্য স্থগিত করে এবং দেশজুড়ে কড়া সমালোচনা করে। কিন্তু সামরিকভাবে তুরস্ক এখনও সংঘর্ষে জড়ায়নি—এটা তাদের পরিপক্ব কৌশলেরই প্রমাণ।
ভবিষ্যতের পথে: সংঘর্ষ নয়, সমঝোতা?
ইসরায়েল মনে করে, একটি খণ্ডিত সিরিয়া তাদের জন্য সুবিধাজনক, কারণ এতে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হতে পারে না। অথচ এই কৌশলই হয়তো তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি তৈরি করবে। কারণ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্ম এই অস্থির পরিবেশেই হয়।
তুরস্কও বুঝে গেছে—একটি স্থিতিশীল সিরিয়া মানে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যারও অনেকটা সমাধান। লাখ লাখ শরণার্থীকে পুনর্বাসন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য সিরিয়ার শান্তি তাদের প্রয়োজন।
বর্তমান উত্তেজনা সত্ত্বেও ইসরায়েল ও তুরস্ক সরাসরি সংঘর্ষে যাবে এমন সম্ভাবনা এখনও খুব কম। কূটনৈতিক সংলাপ, গোয়েন্দা যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক চাপ—সব মিলিয়ে আপাতত যুদ্ধ নয়, শান্তি ও বাস্তববাদই তাদের নীতি।
তবে যদি এই সংলাপ ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে গড়াতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন আরও আন্তরিক ও কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ।
পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, মদিনা মেডিকেল, ০৯ তালা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
হুমায়ুন কবির সাগর
পরিচালক
মাহবুব আলম সৈকত
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: searchbdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৭৫২১১১১৭
Email: ads@searchbdnews.com
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || Serach BD News